নিরীহ নরসুন্দর শিপুল চন্দের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন সিলেটের মোগলাবাজার থানার বৃহত্তর দাউদপুরের ৫ পাড়ার বাসিন্দারা। গরিব এ পরিবারের ভিটেমাটি রক্ষায় তারা স্বোচ্ছার হওয়ার কারণে প্রতিপক্ষ সুরেন পাল গংরা বিষয়টিকে ‘সা¤প্রদায়িক সহিংসতায়’ রূপ দিতেও অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এজন্য নানাভাবে অপপ্রচারের পাশাপাশি এলাকার মুরব্বিদের বিরুদ্ধেও একাধিক হয়রানিমূলক মামলাও দিচ্ছে তারা। এ কারণে ন্যায় বিচার ও এলাকার শান্তিশৃঙ্খলা বজায়ের স্বার্থে সামাজিক শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী সুরেন পাল গংদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও জানিয়েছেন বৃহত্তর দাউদপুরবাসীরা।
বুধবার দুপুরে সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি করা হয়। বৃহত্তর দাউদপুরের ৫ পঞ্চায়েত পশ্চিম দাউদপুর, পূর্ব দাউদপুর, দাউদপুর গাংপার, দাউদপুর মাঝপাড়া ও দাউদপুর কোনারপাড়ার শালিস ব্যক্তিত্বদের উপস্থিতিতে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন দাউদপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও সাবেক ইউপি সদস্য মো. সুরুজ আলী।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘নিরীহ দরিদ্র নরসুন্দর শিপলু চন্দের পরিবারের পক্ষে সামাজিক দায়বোধ থেকেই দল-মত-ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে বৃহত্তর দাউদপুরের ৫ পাড়ার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি। ব্যক্তিগতভাবে আমাদের সাথে সুরেন পালের পরিবারের কোন বিরোধও নেই। কিন্তু বৃহত্তর দাউদপুরের ৫ পাড়ার বাসিন্দাদের কল্যাণেই এই সংবাদ সম্মেলন। এলাকাবাসীর মঙ্গল কামনায় এবং ন্যায়বিচারের স্বার্থে সামাজিক শৃংখলা ভঙ্গকারী বেপরোয়া সুরেন পাল ও তার ভাই-ভাতিজার বিরুদ্ধে অবিলম্বে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। একই সাথে সরকারি অনুদানের রাস্তা শিপুল চন্দের পরিবারের যাতায়াতের জন্য যাতে কোন বাধা সৃষ্টি না হয় সেজন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনাও করেন তিনি।’
তিনি বলেন, দাউদপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামে নরসুন্দর শিপলু চন্দদের বাড়ি। একই গ্রামের বীরেন্দ্র পালের ছেলে সুরেন পাল ও তার ভাই-ভাতিজারা বসবাস করেন; যারা প্রতারক এবং অসৎ প্রকৃতির লোক। তাদের মতো বেপরোয়া চলাফেরা আর উগ্র চরিত্রের লোক পালবাড়ি এলাকায় আর কেউ নাই। তারাই নিরীহ নরসুন্দর শিপুল চন্দদের নানাভাবে নির্যাতন এবং হয়রানি করে আসছে। এমনকি সরকারি অনুদানে নির্মিত সড়ক ব্যবহারে বাঁধা প্রদানের পাশাপাশি চলাচল করতে হলে তাদের ৫ লাখ টাকা চাঁদা দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগও করছে।’
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, সিলেট-রাখালগঞ্জ-ঢাকাদক্ষিণ সড়কের দাউদপুর চৌধুরীবাজার প্রান্ত থেকে শিপুল চন্দদের বাড়ির দূরত্ব প্রায় ৫ শ’ ফুট হবে। মূল সড়ক থেকে তাদের বাড়ি পর্যন্ত যেতে যে রাস্তা রয়েছে তার মধ্যে প্রায় ১৮ ফুট সুরেন পালদের জমিতে পড়েছে। যদিও গত ২০১২-১৩ অর্থবছরে এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে টিআর ও কাবিখার মাধ্যমে মাটি ভরাটের কাজ করে পুরো সড়কটিই পালবাড়ি ও চন্দবাড়ির লোকজনসহ এলাকার যেকোন মানুষ প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য খোলে দেওয়া হয়েছিল। সড়কের জন্য দাউদিয়া গৌছ উদ্দিন চৌধুরী মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ বিনাশর্তে বেশকিছু ভূমিও দান করেছিলেন। কিন্তু রাস্তা স্থাপনের পর থেকেই সুরেন পাল রাস্তার উভয়পাশে বিভিন্ন জাতের গাছ রোপন করে। এ নিয়ে শিপুলরা জিজ্ঞেস করলে সুরেন বলে, ‘রাস্তায় নতুন মাটি দেয়া হয়েছে, বৃষ্টির পানি যাতে মাটি গলিয়ে না নিতে পারে, এ জন্য গাছ লাগাচ্ছি। এগুলো সমস্যা হবে না। রাস্তার মাটি জমে গেলেই গাছের চারা তুলে নেবো।’ এভাবেই শুরু হয় সুরেন পালদের ষড়যন্ত্র।’
তিনি উল্লেখ করেন, এর কয়েকদিনের মধ্যেই সুরেন পালরা শিপলুদের এ পথে চলাচলে বাধা সৃষ্টি করতে থাকেন। এজন্য তারা শিপুলর কাছে ৫ লাখ টাকা দাবি করে তারা বলেন, আমাদের জায়গার উপর দিয়ে তোদের রাস্তা দেবো না, যদি আমাকে নগদ ৫ লাখ টাকা দিতে পারছ, তবে যাওয়া আসা করতে পারবে, অন্যথায় তোদের যাতায়াত বন্ধ।’ এ কথা শুনে হতভম্ব দরিদ্র শিপুল চন্দরা কাকুতি-মিনতি করেও সুরেন পালদের নিবৃত্ত করতে পারেনি। কয়েকদিন পর রাস্তার উপর প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। বাধ্য হয়ে শিপুল আমাদের বৃহত্তর দাউদপুরের ৫ পঞ্চায়েত যেমন, পশ্চিম দাউদপুর, পূর্ব দাউদপুর, দাউদপুর গাংপার, দাউদপুর মাঝপাড়া ও দাউদপুর কোনারপাড়ার মুরব্বিয়ান ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে বিষয়টি অবগত করে এর বিচার চায়। এর পর সালিশ বৈঠকে ভবিষ্যতে আর কোনদিন রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না মর্মে সে প্রতিশ্রæতি দেয় সুরেন পাল। এরপরেও সে প্রতিশ্রæতি রক্ষা না করে নানাভাবে হয়রানি শুরু করে। এমনকি মাদ্রাসার দানকৃত রাস্তার জমিও তার বসতঘরে ডুকিয়ে দেয়। এরপর স্থানীয় মুরব্বিদের পরামর্শে গত ৫ এপ্রিল শিপলু থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।’
সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়, শিপলুর সাধারণ ডায়েরির প্রেক্ষিতে মোগলাবাজার থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এর সত্যতাও পায় এবং ভবিষ্যতে রাস্তা বন্ধ না করার জন্য সুরেন পালদের কঠোর সতর্ক করে। কিন্তু পুলিশের এই নির্দেশের পরও সুরেন পালরা গায়ের জোরে রাস্তার প্রতিবন্ধকতা অপসারণ করেনি। শেষপর্যন্ত এলাকার মুরব্বিয়ান ও জনপ্রতিনিধিরা বিগত ৩ মে সকালে সুরেন পালদের বাড়িতে গিয়ে রাস্তার উপর থেকে প্রতিবন্ধকতা অপসারণের আহবান জানান। তখন সুরেন পাল মুরব্বিয়ানদের ডাকে সাড়া না দিয়ে ৯৯৯ নম্বরে ফোন কল দিলে মোগলাবাজার থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে। পরে অবশ্য সুরেন পাল নিজেই রাস্তার উপর অবৈধভাবে নির্মিত বাঁশ-পালার ঘর তুলে নিতে বাধ্য হন; ফলে রাস্তা আবারও জনসাধারণে চলাচলের উপযোগী হয়।
এরপর এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সুরেন পাল ষড়যন্ত্রমুলকভাবে সা¤প্রদায়িক সহিংসতার রূপ দিতে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাজীব দাশ ও ইউনিয়ন ছাত্রলীগ নেতা রামিমুল ইসলাম লিহিনসহ বৃহত্তর দাউদপুরের ৫ পাড়ার পঞ্চায়েতের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে দায়ী করে অপপ্রচার শুরু করে। এছাড়া সুরেন পালের ছোট ভাই নিরঞ্জন পাল বাদী হয়ে শিপলু চন্দসহ এলাকার মুরব্বিয়ানদের বিরুদ্ধে তার বাড়িঘর লুটপাট ও গাছ-গাছালি কেটে নেয়ার অভিযোগে মোগলাবাজার থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে। এরপরদিন তারা শিপলু চন্দের বাড়িতে হামলা করে ভাঙচুরও চালিয়েছে। একই সাথে তাকে প্রাণনাশের হুমকিও দিয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে মোগলাবাজার থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। মামলাটি (মামলা নং-০৬/৬২, তারিখঃ ০৭/০৫/২০২০ খ্রিঃ) পুলিশী তদন্ত চলছে। এ ঘটনার পর থেকে সুরেন পালের পরিবার বিভিন্নভাবে শিপুল চন্দদের এবং মানবিক কারণে তাদের সহায়তাকারী এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে সুরেন পালের আপন চাচাতো ভাই অজিত পাল ও বিজিত পালরা বলেন, ‘আমরা জনসাধারণের চলাচলের জন্য রাস্তায় ভূমি দান করেছি, এক্ষেত্রে আমাদের আর কোন দাবি নেই। যে কেউ এ রাস্তা ব্যবহার করতে পারবে। তাতে আমরা আপত্তি করতে পারি না। আমরা এলাকাবাসীর সাথে একমত।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মো. মোবারক আলী, মো. আলী আহমদ, আলা উদ্দিন, হেলাল উদ্দিন, বিজিত পাল, উস্তার আলী, সুভাষ চন্দ, গোলাপ মিয়া, ভজন দাশ, লিটন আহমদ, মুইয়ব আলী, আব্দুল কাইয়ূম ও শিপুল পাল।